সিলেট জাফলং ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য: কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও কী দেখবেন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

 

সিলেট জাফলং (Sylhet Jaflong) সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনহাট উপজেলার অন্তর্গত ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি পর্যটনস্থল। যা পর্যটন প্রেমীদের কাছে প্রকৃতির কণ্যা হিসাবে পরিচিত।প্রকৃতি যেন আপন হাতে সাজিয়েছে সিলেটের জাফলংকে। জাফলং জিরো পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে মিলবে ডাউকি ব্রিজ। তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পাথুরে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, মেঘালয়ের উঁচু উঁচু পাহাড়, তার উপর ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা সাদা মেঘ। সব মিলিয়ে এখানকার প্রকৃতি জাফলংকে অনন্য করে তুলেছে।

নিসর্গপ্রেমীদের জন্য সিলেটের জাফলং এক স্বর্গীয় স্থান, যেখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিয়েছে উদারভাবে। বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এই মনোরম পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড়, নদী, ঝর্ণা ও পাথরের অপূর্ব সমন্বয়ে তৈরি এক অনন্য দর্শনীয় স্থান। ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা জাফলং এলে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারে না। পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল, মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, খাসিয়া পুঞ্জির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য—সবকিছু মিলিয়ে জাফলং ভ্রমণ মানেই এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। আপনি যদি জানতে চান কীভাবে জাফলং যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী খাবেন এবং কোন কোন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন—এই লেখায় আপনি পাবেন জাফলং ভ্রমণের বিস্তারিত ও হালনাগাদ তথ্য। পরিকল্পিত ভ্রমণের জন্য এটি হতে পারে আপনার আদর্শ গাইড।

আরো পড়ুন

জাফলংয়ের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানকার আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, শ্রমিকদের পাথর তোলার দৃশ্য, পাথরের উপর দিয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা, পাহাড়ি ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু।একেক ঋতুতে সিলেট জাফলং একেক রূপ ধারণ করে। যা পর্যটকদের সারা বছর জাফলং ভ্রমণে আগ্রহী করে তুলে। তবে আমার কাছে জাফলং ভ্রমণের সেরা সময় মনে হয়েছে বর্ষাকাল বা তার ১-২ মাস পর। কারণ বর্ষাকালে জাফলংয়ের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

 

 জাফলং-এর আকর্ষণীয় স্থানসমূহ

  • পিয়াইন নদী: স্বচ্ছ জলধারার এই নদী পাথরের স্তূপ ও নৌকা ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত।
  • ডাউকি ঝুলন্ত সেতু: সীমান্তবর্তী এই সেতু থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
  • খাসিয়া পুঞ্জি: আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের গ্রাম, যেখানে তাদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখা যায়।
  • মায়াবী ঝর্ণা: বর্ষাকালে সক্রিয় এই ঝর্ণা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
  • পাথর উত্তোলন এলাকা: স্থানীয়দের পাথর সংগ্রহের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা যায়।​

 

 সিলেট জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সিলেট জাফলং বছরের যেকোনো সময় ভ্রমণযোগ্য, তবে বর্ষাকাল (জুন থেকে ডিসেম্বর) বিশেষভাবে উপভোগ্য, কারণ এই সময়ে নদী ও ঝর্ণার জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় ।​
বছরের যেকোনো সময় জাফলং ভ্রমণে যেতে পারবেন। কারণ একেক ঋতুতে জাফলং একেক রূপ ধারণ করে। তবে জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল বা তার ১-২ মাস পর। অর্থাৎ ইংরেজি জুন থেকে ডিসেম্বর মাস।
জাফলং যাওয়ার উপায়
জাফলং যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে সিলেট আসতে হবে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে করে সিলেট আসতে পারবেন।
সিলেট থেকে জাফলং:

 যাতায়াত ব্যবস্থা

বাস: কদমতলী থেকে লোকাল বাসে জনপ্রতি ভাড়া প্রায় ৭০ টাকা, গেইটলক বাসে ১০০ টাকা ।
সিএনজি অটোরিকশা: ভাড়া প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা।
মাইক্রোবাস: ভাড়া প্রায় ৩০০০-৩৫০০ টাকা।​

ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়

ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী সৌদিয়া, গ্রীন লাইন, এস আলম, হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, সোহাগ, এনা, লন্ডন এক্সপ্রেস সহ অন্যান্য পরিবহনে করে সিলেট যেতে পারবেন। এসি/নন-এসি বাস ভেদে ঢাকা টু সিলেট ভাড়া ৭০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৩৬ কিলোমিটার এবং যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা।ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে জয়ন্তিকা, উপবন, পারাবত ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে করে সিলেট যেতে পারবেন। সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৩৭৫ থেকে ১,২৮৮ টাকা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ফ্লাইটে করে সিলেট যেতে পারবেন। ঢাকা টু সিলেট বিমান ভাড়া (ইকোনমি ক্লাস) ৪,৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৫৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে সিলেট:

বাস: এসি ও নন-এসি বাসে ৫০০-১৫০০ টাকা।
ট্রেন: সুবর্ণ এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস ইত্যাদি।
বিমান: ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত ফ্লাইট উপলব্ধ।​

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার উপায়

চট্টগ্রাম থেকে বিআরটিসি, হানিফ, এস আলম, সোহাগ, গ্রীন লাইন, শ্যামলী, এনা, সৌদিয়া পরিবহন চট্টগ্রাম টু সিলেট রুটে চলাচল করে। চট্টগ্রাম টু সিলেট বাস ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে প্রতি শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস ও প্রতি সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সিলেট যায়। ট্রেনের সিট ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ১,৫৪১ টাকা।

কোথায় খাবেন ও কি খাবেন(খাবার ও রেস্টুরেন্ট):

সিলেট জাফলং এলাকায় স্থানীয় খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে দেশীয় খাবার পাওয়া যায়।​জাফলং খাবার জন্য বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে সীমান্ত ভিউ রেস্টুরেন্ট, জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্ট ও জাফলং পর্যটন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। আপনি এখানে থেকে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

যদি বড় গ্রুপ নিয়ে ঘুরতে যান তাহলে তাহলে আগেই এখানকার রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার দেওয়া ভালো। এখানকার খাবারের মান আমার কাছে বেশ ভালো মনে হয়েছে এবং কম খরচে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন।

এছাড়া সিলেট শহরের জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত পালকি রেস্টুরেন্ট, পানসী রেস্টুরেন্ট ও পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট থেকে কম খরচে পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। এখানকার ভর্তা গুলো আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। এখান থেকে সকালের নাস্তা সহ দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারেন।খাবারের মেন্যু গুলোর মধ্যে গরুর মাংস, খাশির মাংস, দেশি মুরগী, কালো ভুনা, বিভিন্ন পদের মাছ, সবজি, ডাল, ডিম, ভর্তা, সাদা ভাত, খিচুড়ি উল্লেখযোগ্য।

 থাকার ব্যবস্থা /কোথায় থাকবেন:

জাফলং এলাকায় কিছু রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে, তবে অধিকাংশ পর্যটক সিলেট শহরে অবস্থান করে দিনভ্রমণে জাফলং যান।​
জাফলং ভ্রমণে গিয়ে অধিকাংশ পর্যটকেরা রাত্রিযাপন করার জন্য সিলেট শহরে ফিরে আসেন। কারণ সিলেট শহরে রাত্রিযাপন করার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল ও লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।

সিলেট শহরে বেশি ভাগ আবাসিক হোটেল গুলো হযরত শাহজালাল মাজারের আশেপাশে অবস্থিত। এছাড়া তালতলা, আম্ভরখানা, কমদতলী ও লামাবাজারে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।

যে সকল পর্যটকেরা সিলেট জাফলং

সিলেট জাফলং ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য: কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও কী দেখবেন
সিলেট জাফলং ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য: কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন ও কী দেখবেন

রাত্রিযাপন করতে চান তারা জাফলং জিরো পয়েন্টের কাছে জাফলং গ্রিন রিসোর্ট, মামার বাজার এলাকায় হোটেল প্যারিসনও জাফলং ইন হোটেল সহ বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজ পাবেন।

এছাড়া জাফলংয়ের কাছে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট ও ল্যান্ডস্কোপ ভিউ রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে পারেন। কম খরচে রাত্রিযাপন করার জন্য সরকারি গেস্ট হাউজে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। “সিলেট জাফলং হোটেল ভাড়া” ও অন্যান্য তথ্য জানুন

 সিলেট জাফলং ভ্রমণ টিপস

বর্ষাকালে ভ্রমণ করলে অতিরিক্ত কাপড় ও রেইনকোট সঙ্গে রাখুন।
খাসিয়া পুঞ্জি পরিদর্শনের সময় তাদের সংস্কৃতি ও নিয়ম মেনে চলুন।
নদীতে নৌকা ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।​
জাফলং সীমান্তবর্তী এলাকা তাই আইন-কানুন মেনে চলুন।
কোনো কিছু কেনাকাটা বা ভাড়া ঠিক করার সময় দামাদামি করে নিবেন।
কম খরচে ট্যুর দিয়ে চাইলে গ্রুপ করে ট্যুর করুন।
পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
সিলেট জাফলং অনেক ভারতীয় পণ্য পাওয়া যায়, নকল পণ্য যাচাই করে কিনবেন।
স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন, মোবাইল নাম্বার 01320-158350

জফলংয়ের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

সিলেট জাফলং এর আশেপাশে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। হাতে সময় নিয়ে এসব দর্শনীয় স্থান সমূহ ঘুরে আসবেন। এর মধ্যে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, লালাখাল, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, শাপলা বিল, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, রাংপানি উল্লেখযোগ্য।

শেষকথা :

সিলেট জাফলংভ্রমণ শুধু একটি পর্যটন নয়, এটি এক অপূর্ব অনুভব—যেখানে প্রকৃতির নিসর্গ, পাহাড়ি বাতাস, স্বচ্ছ নদীজল এবং স্থানীয় সংস্কৃতি মিলেমিশে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেয়। যারা ব্যস্ত শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি চান, তাদের জন্য জাফলং হতে পারে নিঃসন্দেহে এক আদর্শ গন্তব্য। ভ্রমণের পূর্বে ভালোভাবে যাতায়াত, আবাসন এবং খাবারের প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে ভ্রমণ হবে আরও স্মরণীয় ও আনন্দময়। এ লেখায় আমরা চেষ্টা করেছি সিলেট জাফলং ভ্রমণের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে—কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন এবং কোন কোন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখবেন। আশা করি, এই তথ্যগুলো আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় সহায়ক হবে এবং আপনাকে দেবে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির সঙ্গে একান্ত কিছু মুহূর্ত কাটাতে সিলেট জাফলং আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে—আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে এই অনন্য সুন্দর স্থানটি।

 

 

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আমি মো: নূরে আলম সিদ্দিকী পেশায় একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট এবং ব্লগ, ইউটিউব এবং ফেসবুক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর