ভূমিকা:
অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম : পাসপোর্ট হল আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য একটি অপরিহার্য ডকুমেন্ট। সময়ের সাথে সাথে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা পৃষ্ঠা পূর্ণ হয়ে গেলে তা রিনিউ করা প্রয়োজন।আগে পাসপোর্ট রিনিউ করতে লোকজনকে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, কিন্তু এখন অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার সুবিধা চালু হওয়ায় প্রক্রিয়াটি সহজ এবং দ্রুততর হয়েছে। কারণ এখন এটি অনলাইনে করা যায়। যারা বিদেশে কাজ, পড়াশোনা বা ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য একটি আপডেটেড পাসপোর্ট অপরিহার্য। এই ব্লগে আমরা অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, ফি এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পাসপোর্ট রিনিউ করার গুরুত্ব
পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ নথি যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় আপনার পরিচয় ও নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে এটি আর বৈধ থাকে না, তাই সময়মতো পাসপোর্ট রিনিউ করা জরুরি। চলুন, পাসপোর্ট রিনিউ করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ জেনে নিই:
আরো পড়ুন
১. আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য
বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর ও ইমিগ্রেশনে বৈধ পাসপোর্ট প্রয়োজন। মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট থাকলে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না।
২. ভিসা আবেদনের জন্য দরকারি
অনেক দেশের ভিসা আবেদন করার সময় পাসপোর্টের ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদ থাকা বাধ্যতামূলক। পাসপোর্টের মেয়াদ কম থাকলে, ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে।
৩. জরুরি পরিস্থিতিতে বাধাহীন যাত্রা
জরুরি কাজে বিদেশ যেতে হলে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। রিনিউ করা থাকলে, যেকোনো সময় নিরবচ্ছিন্নভাবে ভ্রমণ করা যায়
৪. পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ
পাসপোর্ট শুধু ভ্রমণের জন্য নয়, অনেক সময় পরিচয়পত্র হিসেবেও কাজে লাগে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সরকারি কাজে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণপত্র।
৫. সময় ও ঝামেলা বাঁচানো
শেষ মুহূর্তে পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলে অতিরিক্ত ঝামেলা ও জরুরি ফি গুনতে হতে পারে। সময়মতো রিনিউ করলে এ সমস্যা এড়ানো যায়।
পাসপোর্ট রিনিউ করার পূর্বে যা করণীয়
পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রক্রিয়াটি সহজ করতে কিছু প্রস্তুতি ও ধাপ মেনে চলা জরুরি। নিচে ধাপে ধাপে পাসপোর্ট রিনিউ করার পূর্বে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো:
১. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করুন
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লাগবে। যেমন:
- বর্তমান পাসপোর্ট (মূল কপি ও ফটোকপি)
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ
- বিদ্যমান পাসপোর্টের তথ্য পৃষ্ঠা ও ভিসা পৃষ্ঠার ফটোকপি (প্রয়োজনে)
- পাসপোর্টের মেয়াদ শেষের আগে রিনিউ করলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখের প্রমাণ
- ছবি: নির্দিষ্ট মাপ ও ফরম্যাট অনুযায়ী (যদি প্রয়োজন হয়)
- ই-পাসপোর্টের জন্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ স্ক্যানের তথ্য (যদি নতুন ই-পাসপোর্ট নিতে চান)
২. অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করুন
বাংলাদেশে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া রয়েছে:
পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে যান: www.epassport.gov.bd
“Apply for Renewal” অপশনে ক্লিক করুন।

প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন এবং আবেদন সাবমিট করুন।
৩. ফি পরিশোধ করুন
পাসপোর্টের ধরন ও প্রসেসিং টাইম অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করা হয়:
- সাধারণ (১৫ কার্যদিবস): ৪,০২৫ টাকা
- জরুরি (৭ কার্যদিবস): ৬,৩২৫ টাকা
- অতি জরুরি (৩ কার্যদিবস): ৮,৬২৫ টাকা
- পেমেন্ট অপশন: ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং (নগদ, বিকাশ, রকেট), বা সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া যায়।
৪. সাক্ষাৎকারের জন্য তারিখ নির্ধারণ করুন
অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর পাসপোর্ট অফিস থেকে সাক্ষাৎকারের তারিখ দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত থেকে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) এবং চোখের মণি স্ক্যান (আইরিশ স্ক্যান) সম্পন্ন করতে হবে।
৫. প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করুন
আবেদন ফরমের সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কিনা তা যাচাই করুন।
- নামের বানান
- জন্ম তারিখ
- NID/জন্ম নিবন্ধনের নম্বর
- বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা
৬. পুরনো পাসপোর্ট সংরক্ষণ করুন
পাসপোর্ট রিনিউ প্রক্রিয়া চলাকালীন পুরনো পাসপোর্টের একটি ফটোকপি নিজের কাছে রাখুন, যা প্রয়োজন হলে দেখাতে পারবেন।
৭. আবেদনের অগ্রগতি ট্র্যাক করুন
পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনের অগ্রগতি অনলাইনে ট্র্যাক করা যায়। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করলে পাসপোর্ট রিনিউ প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। আবেদন করার আগে সব নথিপত্র প্রস্তুত রাখুন এবং সময়মতো আবেদন করুন।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে
- আবেদনপত্রের সামারি প্রিন্ট কপি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহ);
- জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি;
- আগের পাসপোর্ট এবং ফটোকপি (যদি থাকে);
- এ চালানের কপি;
- সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO/NOC (যদি থাকে);
- তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র;
- রেজিস্ট্রেশন ফরমের প্রিন্ট কপি।
পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত?
পাসপোর্ট রিনিউ করার খরচযেমন : ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৪,০২৫ টাকা এবং ৬৪ পাতার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৬,৩২৫ টাকা। অপরদিকে ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৫,৭৫০ টাকা এবং ৬৪ পাতার পাসপোর্ট রিনিউ ফি ৮,০৫০ টাকা। সাধারণত পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি নূতন পাসপোর্ট আবেদন ফি’র মতই।
অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার ধাপগুলো
১. অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ
পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রথম ধাপ হল অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করা। বাংলাদেশে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আপনাকে ডিপার্টমেন্ট অফ ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট (ডিআইপি)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে গিয়ে “পাসপোর্ট রিনিউ” অপশনটি নির্বাচন করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য:
- পুরোনো পাসপোর্ট নম্বর
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
- জন্ম তারিখ
- যোগাযোগের তথ্য (ইমেল ও ফোন নম্বর)
২. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া
অনলাইন ফর্ম পূরণ করার পর আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। সাধারণত নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলোর প্রয়োজন হয়:
- পুরোনো পাসপোর্টের স্ক্যান কপি
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
- ইউটিলিটি বিল বা ঠিকানা প্রমাণের জন্য অন্যান্য ডকুমেন্ট
৩. ফি পরিশোধ
অনলাইন ফর্ম পূরণ এবং ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর আপনাকে পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধের জন্য ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা যায়। ফি পরিশোধের পর আপনি একটি রিসিপ্ট পাবেন, যা পরবর্তী ধাপে প্রয়োজন হবে।
৪. অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
ফি পরিশোধের পর আপনাকে নিকটতম পাসপোর্ট অফিসে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে। অনলাইন পোর্টাল থেকে আপনি আপনার সুবিধাজনক তারিখ এবং সময় নির্বাচন করতে পারবেন।
৫. বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন :
অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার বায়োমেট্রিক ডেটা (আঙুলের ছাপ, স্বাক্ষর এবং ফটো) সংগ্রহ করা হবে। এই ধাপটি সম্পন্ন হলে আপনার নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার সুবিধা :
- সহজ প্রক্রিয়া: অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং ব্যবহারকারীবান্ধব।
- সময় সাশ্রয়: লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই, যা সময় সাশ্রয় করে।
- ট্র্যাকিং সুবিধা: অনলাইন পোর্টাল থেকে আপনি আপনার পাসপোর্টের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারবেন।
- কম ভুলের সম্ভাবনা: অনলাইন ফর্ম পূরণের সময় ভুলের সম্ভাবনা কম থাকে।
পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় যেসব বিষয় মনে রাখবেন :
- ডকুমেন্টের সঠিকতা: সব ডকুমেন্ট সঠিক এবং আপ টু ডেট কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- ফটোর গুণগত মান: পাসপোর্ট সাইজের ছবি অবশ্যই স্পষ্ট এবং সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে হতে হবে।
- ফি পরিশোধের রিসিপ্ট: ফি পরিশোধের রিসিপ্ট সংরক্ষণ করুন, এটি পরবর্তীতে প্রয়োজন হতে পারে।
- অ্যাপয়েন্টমেন্ট সময়সূচি: অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ এবং সময় মনে রাখুন বা নোট করে রাখুন।
FAQ: সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
১. পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত সময় লাগে?
সাধারণত পাসপোর্ট রিনিউ করতে ৭ থেকে ১৫ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে জরুরি পরিষেবা নিলে এটি ৩-৫ কার্যদিবসে সম্পন্ন হতে পারে।
২. পাসপোর্ট রিনিউ ফি কত?
পাসপোর্ট রিনিউ ফি পাসপোর্টের ধরন এবং পৃষ্ঠার সংখ্যার উপর নির্ভর করে। সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ফি ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৩. পুরোনো পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কি করব?
পুরোনো পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে আপনাকে প্রথমে একটি জিডি করতে হবে এবং তারপর নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।
৪. অনলাইন ফর্ম পূরণে সমস্যা হলে কি করব?
অনলাইন ফর্ম পূরণে সমস্যা হলে আপনি ডিআইপি-এর হেল্পলাইন নম্বর বা নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
আরো পড়ুন:অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
উপসংহার:
অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রক্রিয়া এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ এবং দ্রুত। এই গাইডে আমরা আপনাকে ধাপে ধাপে পাসপোর্ট রিনিউ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছি, যা আপনাকে সময় এবং শ্রম বাঁচাতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, সঠিক ডকুমেন্ট এবং তথ্য প্রদান করলে পাসপোর্ট রিনিউ প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে যায়।
এই ব্লগটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে এটি শেয়ার করে অন্যকেও সাহায্য করুন। আপনার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান। ধন্যবাদ!