অনলাইনে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করুন(www.land.gov bd): বিস্তারিত গাইড

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

✍ পোস্ট সূচিপত্র

সূচনা :

আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান : আমাদের সকলের  জমি-সম্পত্তি নিয়ে সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে আর এস খতিয়ান (রিভিশনাল সার্ভে রেকর্ড) একটি প্রধান দলিল যা জমির মালিকানা ও সীমানা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। তাই অনেকেই এই খতিয়ান অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগেন। আর এস খতিয়ান কীভাবে অনুসন্ধান করবেন? জমির মালিকানা, সীমানা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিভাবে পেতে হয় তা সঠিকভাবে জানে না । 

এই ব্লগে, আমি আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করবো এবং এর সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সহজ গাইড লাইন ,প্রয়োজনীয় কৌশল এবং প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দেব। 

আর এস খতিয়ান কী এবং এর গুরুত্ব কী?

আর এস খতিয়ান হলো  এক বিশেষ রেকর্ড বা জমির একটি সরকারি দলিল যা জমির মালিকানাকে বুঝায় , এছাড়াও প্লট নম্বর এবং জমির পরিমাপ সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করে । এটি শুধুমাত্র খাস জমি রেকর্ড করার জন্য তৈরি করা হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত খাস অর্থাৎ কৃষি কিংবা অকৃষি জমি রয়েছে তার রেকর্ড আর এস পর্চায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আর এস খতিয়ান, যার পূর্ণরূপ রাইটস সেটেলমেন্ট খতিয়ান। এটি একটি নির্দিষ্ট মৌজার সমস্ত জমির মালিকানার একটি রেকর্ড সম্বলিত নথি। যাকে আর এস পর্চা বলা হয়।


আর এস খতিয়ান রিভিশনাল সার্ভের সময় প্রস্তুত করা হয়। এর গুরুত্ব হলো:

  1. মালিকানার প্রমাণ: জমির বৈধ মালিকানা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
  2. বিতর্ক সমাধান: সীমানা বা মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ।
  3. সম্পত্তি হস্তান্তর: জমি ক্রয়-বিক্রয় বা দলিল রেজিস্ট্রেশনে প্রয়োজনীয়।
  4. আইনগত প্রয়োজনীয়তা: বিভিন্ন সরকারি কাজ এবং আদালতের প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয

 

 অনলাইনে  আর এস খতিয়ান চেক করতে যা লাগে :

 আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান , ঘরে থাকা / পুরনো হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া আর এস পর্চা কিভাবে খুজে বের করবেন এবং অনলাইন থেকে সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য লাগে । তাই  আর এস খতিয়ান অনলাইন চেক করতে হলে খতিয়ান সম্পৃক্ত বেশ কিছু তথ্য দেয়া হলো  যেমনঃ

  • বিভাগ
  • জেলা
  • উপজেলা
  • সঠিক মৌজা / জে এল নং
  • দাগ/ খতিয়ান নং

আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান পদ্ধতি:

অনলাইনে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করুন(www.land.gov bd) বিস্তারিত গাইড (2)
                                                                                       অনলাইনে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করুন

আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের  করার জন্য  প্রত্যেক নাগরিককে প্রবেশ করতে হবে dlrms.land.gov.bd ওয়েবসাইটে এবং এরপরে সার্ভে খতিয়ান অপশনে যেতে হবে। এবং আর এস খতিয়ান সম্পৃক্ত কিছু তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান করলে জমির মালিকের নাম খুঁজে পাওয়া যাবে। এর পরে আপনি যদি চান তাহলে   ৫০ টাকা ফি পরিশোধ করে খতিয়ানের সার্টিফিকেট কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।

এবার আপনি আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

১. জমির তথ্য সংগ্রহ করুন

আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের আগে জমির নিম্নোক্ত তথ্য সংগ্রহ করুন:

  • জমির প্লট নম্বর
  • মৌজার নাম
  • জমির ধরণ
  • জমির পূর্বের মালিকের নাম

 

২. অনলাইনে www.land.gov.bd এ আর এস খতিয়ান  অনুসন্ধান করুন:

বর্তমানে বাংলাদেশে জমি সংক্রান্ত তথ্য অনলাইনে অনুসন্ধান করা সম্ভব। জমির আর এস খতিয়ান পেতে নিচের ধাপ অনুসরণ করুন:

অনলাইনে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করুন(www.land.gov bd) বিস্তারিত গাইড (2)
                                                                        অনলাইনে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করুন

www.land.gov bd এই ওয়েবসাইটে  আর এস খতিয়ান  অনুসন্ধান এর করতে সরাসরি প্রথমে ভিজিট করুন dlrms.land.gov.bd অথবা  www land gov bd ওয়েবসাইট থেকে স্মার্ট ভূমি রেকর্ড ও ম্যাপ অংশে প্রবেশ করতে পারেন। এরপরে যথাক্রমে সার্ভে খতিয়ান সিলেক্ট করতে হবে , এরপরে ধাপে ধাপে নিচের তথ্য গুলো আপনাকে সাবমিট  করতে হবে –

০১.বিভাগ চয়ন করুন

০২.  জেলা বাছাই করুন

০৩.  উপজেলা বাছাই করুন

উপরোক্ত    তথ্য গুলো সিলেক্ট করার   পরে  খতিয়ানের ধরন থেকে অবশ্যই আরএস সিলেক্ট করে দিতে হবে পরবর্তীতে সঠিক মৌজা/ কিংবা জে এল নং দিয়ে অনুসন্ধান করে সিলেকশন করতে হবে  এরপরে সঠিক খতিয়ান নম্বর জানা থাকলে সেটি বসিয়ে দিতে হবে

যদি খতিয়ান নম্বর জানা না থাকে তাহলে  দাগ নম্বর কিংবা জমির মালিকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অনেক  অনুসন্ধান অপশনে  ক্লিক করতে হবে।

এবার ক্লিক করার পর যদি আপনার তথ্যের সাথে সার্ভারের তথ্যের মিল থাকলে আরএস খতিয়ান সম্পৃক্ত তথ্যগুলো দেখতে পাবেন। এক্ষেত্রে  আপনি চাইলে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সার্টিফাইড খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারবেন। আর যদি কোন কারণে  আপনার সাবমিটকৃত তথ্যগুলো যদি সার্ভারে না মিলে অর্থাৎ আপনার খতিয়ানটি যদি অনলাইনে খুঁজে পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমি অফিসে গিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।

৩. ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান:

আপনার জমির অবস্থান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করুন। সেখানে খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্যের জন্য একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।

৪. জেলা রেকর্ড রুমে অনুসন্ধান করুন

জেলার রেকর্ড রুমে গিয়ে জমির আর এস খতিয়ানের তথ্য যাচাই করুন। সেখানে দলিলের একটি কপি নেওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।

৫. আইনি পরামর্শ গ্রহণ করুন

যদি আপনার জমি নিয়ে বিরোধ বা আইনি জটিলতা থাকে, তবে আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

অনলাইন আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের যা যা সুবিধা পাওয়া যায় :

০১. সময় সাশ্রয়ী: অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
০২. স্বচ্ছতা: জমির মালিকানার তথ্য সহজেই যাচাই করা সম্ভব।
০৩.ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন: প্রয়োজন হলে অনলাইনে খতিয়ানের কপি ডাউনলোড করে রাখা যায়।
০৪. দুর্নীতির সম্ভাবনা কম: অনলাইনে স্বয়ংক্রিয় তথ্য থাকার ফলে ভুয়া কাগজপত্র তৈরির সুযোগ কমে যায়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১.অনলাইনে খতিয়ানের তথ্য খুঁজে না পেলে করণীয় কি
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমগ্র বাংলাদেশের ভূমি সংক্রান্ত তথ্য অনলাইন করন চলছে, এক্ষেত্রে সমগ্র এলাকার তথ্য একসঙ্গে অনলাইনে নাও পাওয়া যেতে পারে, ভবিষ্যতে এগুলা অনলাইন সংস্করণ হবে, যদি কোন তথ্য অনলাইনে খুঁজে না পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে নিকটস্থ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা গেল
২. আর এস খতিয়ান পেতে কত সময় লাগে?
সংশ্লিষ্ট অফিসে ভিড় এবং আবেদন প্রক্রিয়া অনুসারে সময় বিভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, এটি পেতে ৭-১৫ দিন সময় লাগে।

৩. খতিয়ানের কপি হারিয়ে গেলে কী করবেন?
কপি হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস বা জেলা রেকর্ড রুম থেকে একটি নতুন কপি সংগ্রহ করতে পারেন।

৪. আর এস খতিয়ান কি আদালতে গ্রহণযোগ্য?
হ্যাঁ, আর এস খতিয়ান জমি সংক্রান্ত মামলায় আদালতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৫. অনলাইনে খতিয়ানের ফি কত?
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধানের জন্য সাধারণত নামমাত্র একটি ফি প্রযোজ্য। এটি ওয়েবসাইটে উল্লেখ থাকে।
৬.খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান কি?
খতিয়ান পর্চ অনুসন্ধান হলো ভূমির রেকর্ড খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া, অর্থাৎ কোন ব্যক্তির নামে রেকর্ডটি বৈধ কিনা ইত্যাদি যাচাই করার জন্য খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমির মালিকানা, ভূমি ব্যবহারের ধরন, জমির আয়তন, জমির দাম, ইত্যাদি তথ্য জানা যায়।

৭.নামজারি খতিয়ান কিভাবে দেখব?
সাধারণত নামজারি হলো জমি ক্রয় বিক্রয়কালে জমির মালিকানা নিবন্ধন করে হস্তান্তর নেওয়া। নাম জানি আবেদন করার মাধ্যমে জমির নামজারি হয়ে থাকে এবং এ সময়ে একটি নামজারি খতিয়ান তৈরি হয় যেটা যাচাই করার জন্য eporcha ওয়েবসাইটের নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান পেজে যেতে হবে

৮.অনলাইনে কিভাবে খতিয়ান চেক করব?
অনলাইনে খতিয়ান চেক করতে dlrms.land.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে খতিয়ান অপশন থেকে খতিনের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।

৯.খতিয়ান নাম্বার কিভাবে বের করব?
যদি খতিয়ান নাম্বার আপনার জানা না থাকে সেই ক্ষেত্রে মূল খতিয়ানের উপরে খুঁজে দেখবেন একটি নির্দিষ্ট নাম্বার দেয়া থাকবে সেটি হল খতিয়ান নম্বর।
১০. আর এস খতিয়ান এবং সিএস খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্য কী?
সিএস খতিয়ান হলো প্রথম সার্ভে রেকর্ড, যেখানে আর এস খতিয়ান হলো রিভিশনাল সার্ভের সময় হালনাগাদ করা দলিল।

উপসংহার:

অনলাইন আর এস খতিয়ান অনুসন্ধানের মাধ্যমে জমির তথ্য সংগ্রহ করা এখন খুবই সহজ এবং নিরাপদ। এটি ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমিয়ে মানুষের সময় ও শ্রম বাঁচাতে সাহায্য করছে। আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করলে জমি-সম্পত্তি নিয়ে যেকোনো জটিলতা সহজে সমাধান করা সম্ভব। সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে পারবেন। তাই, জমির তথ্য জানতে চাইলে সরকারি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সহজেই খতিয়ান অনুসন্ধান করুন।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আমি মো: নূরে আলম সিদ্দিকী পেশায় একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট এবং ব্লগ, ইউটিউব এবং ফেসবুক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর

Leave a Comment