শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে ও শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে জানুন

সূচনা:শবে বরাত কেন এত গুরুত্বপূর্ণ:

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

শবে বরাত, যাকে “লাইলাতুল বারাআত” বা মুক্তির রাতও বলা হয়, ইসলামের অন্যতম পবিত্র রাতগুলোর মধ্যে একটি। শবে বরাত ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা গুনাহ মাফের ও দোয়া কবুলের রাত হিসেবে বিবেচিত হয়। এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির দরজা খুলে দেন। এই রাতে মুসলিমরা আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের আশায় ইবাদত করেন। ২০২৫ সালের শবে বরাত উদযাপনের জন্য মুসলিম উম্মাহ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। 

কিন্তু শবে বরাত কত তারিখে? নামাজ কিভাবে পড়বেন? কোন দোয়া পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়? এই ব্লগে আমরা শবে বরাত ২০২৫ সালের নির্দিষ্ট তারিখ এবং শবে বরাতের তাৎপর্য, নামাজের নিয়ম, দোয়া এবং এই রাতের বিশেষ নামাজ ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

শবে বরাতের ইতিহাস:

শবে বরাত সম্পর্কে ইসলামে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। এটি মূলত শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে পালিত হয়। মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে, এই রাতে বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ হয় এবং আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদের ক্ষমা করেন।

শবে বরাত ২০২৫ কত তারিখে?:

২০২৫ সালের শবে বরাত ১৪ ফেব্রুয়ারি, শনিবার দিবাগত রাত (১৫ শাবান ১৪৪৬ হিজরি) পালিত হবে। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, শাবান মাসের ১৫ তারিখ দিবাগত রাতই হলো শবে বরাত। গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।এই রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, “এই রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন।” (ইবনে মাজাহ)

শাবান মাসের একটি মর্যাদাপূর্ণ রাতের নাম শবে বরাত। হাদিসের ভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ১৫ শাবানের রাত। ‘শবে বরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। 

শবে বরাতের তাৎপর্য ও ফজিলত:

শবে বরাতের রাতটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কারণ এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। এটি ইবাদত, তওবা ও দোয়ার রাত হিসেবে পরিচিত। অনেক মুসলিম সারারাত ইবাদতে কাটান এবং রোজা রাখেন।এই রাতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:
  • মুক্তির রাত: আল্লাহ তাআলা এই রাতে বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
  • রিজিক নির্ধারণ: এই রাতে পরবর্তী বছরের রিজিক, মৃত্যু ও অন্যান্য ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়।
  • ইবাদতের সুযোগ: নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

বিভিন্ন হাদিসে শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন এবং রহমতের দরজা খুলে দেন, তবে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণকারীদের ক্ষমা করা হয় না।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত:

শবে বরাতের রাতে নফল নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। শবে বরাতের নামাজ কোনো ফরজ বা ওয়াজিব ইবাদত নয়, তবে এটি নফল হিসেবে পড়া যায়। নামাজের নিয়ম হলো:
  • নিয়ত: আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি।
  • রাকাত সংখ্যা: সাধারণত ১২ রাকাত নামাজ পড়া হয়, প্রতি ২ রাকাতে সালাম ফিরিয়ে।
  • সুরা: প্রতিটি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস পড়া উত্তম।
  • দোয়া: নামাজ শেষে দীর্ঘক্ষণ দোয়া ও ইস্তিগফার করা।
টিপস: নামাজের আগে গোসল করে পবিত্র হওয়া এবং সাদা পোশাক পরা সুন্নত।

শবে বরাতের বিশেষ দোয়া ও আমল:

এই রাতের কিছু বিশেষ আমল হলো:

  • ইস্তিগফার: “আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম” (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি)।
  • দরুদ শরিফ: বেশি বেশি দরুদ পড়ুন।
  • কুরআন তিলাওয়াত: সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক ও সুরা দুখান পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

এই রাতের কিছু বিশেষ দোয়া হলো:

দোয়া: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ” (হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাই)।

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিজকান ওয়াসিয়ান, হালালান তায়্যিবান, ওয়া আমালান মুতাকাব্বালান, ওয়া তাওবাতান নাসুহা” (হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রশস্ত হালাল রিজিক, কবুলযোগ্য আমল ও খাঁটি তাওবা চাই)।

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজু বিকা মিনান নার” (হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই)।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত

শবে বরাতের রাতে সাধারণত ৬, ৮, ১০ বা ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়া হয়। অনেকে ১০০ রাকাত নামাজও আদায় করে থাকেন।

শবে বরাতের নামাজের সময়:

শবে বরাতের নামাজ মাগরিবের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে মধ্যরাতের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়টিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করা হয়।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম

শবে বরাতের নামাজ সাধারণত দুই রাকাত করে আদায় করা হয়। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস বা অন্যান্য ছোট সূরা পড়া হয়।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

নিয়ত: ‘নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক‘আতাইনি নাফলান’।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত আরবি

نويت أن أصلي لله تعالى ركعتين نفلاً

শবে বরাত উদযাপন: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

শবে বরাত উদযাপনে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন:

  • আতশবাজি ও ফানুস: ইসলামে এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
  • অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া: ইবাদতের রাতকে উৎসবে পরিণত করা ঠিক নয়।
  • মাজার জিয়ারত: শবে বরাতের রাতে মাজার জিয়ারতের বিশেষ ফজিলত নেই।
  • ইসলামে শবে বরাত উদযাপনের সঠিক পদ্ধতি হলো ইবাদত, দোয়া ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।

বাংলাদেশে শবে বরাতের ঐতিহ্য:

বাংলাদেশে শবে বরাত পালনের কিছু বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে:

  • মসজিদে ইবাদত: মসজিদগুলো সারা রাত খোলা থাকে এবং মুসল্লিরা জামাতের সাথে নামাজ পড়েন।
  • হালুয়া-রুটির প্রচলন: অনেক পরিবারে হালুয়া-রুটি বানিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
  • রাস্তায় আলোকসজ্জা: শহর ও গ্রামে রাস্তায় আলোকসজ্জা করা হয়, যা ইসলামিক ঐতিহ্যের অংশ নয়। 

আরো পড়তে পারেন 👉
🤱ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নামের তালিকা অর্থসহ
🤱ইসলামিক নাম ছেলেদের অর্থসহ

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে আপনার মতামত বা প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: শবে বরাতের রাতে বিশেষ কোনো দোয়া আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা কামনার জন্য বিশেষ দোয়া পড়া যায়।

প্রশ্ন: শবে বরাতের রাতে জেগে থাকাটা কি আবশ্যক?

উত্তর: এটি ফরজ নয়, তবে সুন্নত ও নফল ইবাদত করার জন্য জেগে থাকলে সওয়াব পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: শবে বরাতের রোজার গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তর: রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন, তাই শবে বরাতের পরের দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব।

প্রশ্ন: শবে বরাতের নামাজ কি ফরজ?

না, শবে বরাতের নামাজ নফল।

প্রশ্ন: শবে বরাতের রাতে কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত কি?

হ্যাঁ, এই রাতে কুরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সওয়াব রয়েছে।

প্রশ্ন:  শবে বরাতের রাতে মাজার জিয়ারত করা যাবে কি?

মাজার জিয়ারতের বিশেষ ফজিলত নেই, তবে সাধারণভাবে মাজার জিয়ারত করা যায়।

প্রশ্ন: শবে বরাতের রাতে হালুয়া-রুটি বিতরণের বিধান কি?

এটি একটি প্রচলিত প্রথা, তবে ইসলামে এর কোনো বিশেষ বিধান নেই।

উপসংহার:

শবে বরাত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত, যেখানে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন। এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও তওবা করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। শবে বরাত ২০২৫ সম্পর্কে এই তথ্য আপনাকে সঠিকভাবে ইবাদত করতে সহায়তা করবে।দোয়া ও তওবা করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। শবে বরাত ২০২৫ সম্পর্কে এই তথ্য আপনাকে সঠিকভাবে ইবাদত করতে সহায়তা করবে।

 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ আমি মো: নূরে আলম সিদ্দিকী পেশায় একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট এবং ব্লগ, ইউটিউব এবং ফেসবুক কন্টেন্ট ক্রিয়েটর

Leave a Comment