সূচনা :
আসসালামুআলাইকুম, প্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাই ও বোনেরা আশা করি আপনারা ভালো আছেন। আমি এ পোস্টে ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান ইবাদত নামাজ এবং মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক (ফরজ) সম্পর্কে নামাজের ফরজ কয়টি?,নামাজের বাহ্যিরে ৬ ফরজ,নামাজের ভেতরের ৮ ফরজ । আর এই
বিষয় গুলো না জানলে প্রত্যেক নামাজের নির্দিষ্ট কিছু অংশ আছে বা নিয়ম আছে যেগুলো বাদ গেলে Namaz শুদ্ধ হবে না, এগুলোকে বলা হয় নামাজের ফরজ বা আবশ্যিক কাজ। এজন্য এই ব্লগে আমরা নামাজের ফরজ কতগুলো এবং সেগুলো কী কী তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
নামাজের মধ্যে বাহির ও ভিতর ফরজ কয়টি?:
নামাজের ফরজ মোট ১৪টি। এর মধ্যে ৬টি নামাজের বাহ্যিক ফরজ এবং ৮টি নামাজের ভেতরের ফরজ। নিচে প্রত্যেকটি ফরজ আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
আরো পড়ুন
নামাজের বাহিরে ৬ ফরজ:
নামাজের বাহ্যিক ফরজগুলো হলো এমন কাজ, যেগুলো নামাজ শুরুর আগে বা নামাজ চলাকালীন শারীরিকভাবে করতে হয়। এগুলোকে সঠিকভাবে পালন না করলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। বাহ্যিক ফরজগুলো হলো:
০১.তাহারাত (পবিত্রতা)
নামাজ শুরুর আগে অবশ্যই শারীরিক এবং পোশাকের পবিত্রতা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অজু বা গোসল করা এবং পোশাক ও স্থান পরিষ্কার রাখা। কোনো অপবিত্রতার মধ্যে নামাজ পড়া যাবে না।
০২.সতর ঢাকা
নামাজ আদায়ের সময় দেহের নির্দিষ্ট অংশ ঢেকে রাখা ফরজ। পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের পুরো শরীর, হাতের কবজি ও মুখমণ্ডল ছাড়া বাকি অংশ ঢেকে রাখা জরুরি।
০৩.কিবলামুখী হওয়া
নামাজ পড়ার সময় অবশ্যই কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। যদি কেউ কিবলার দিকে মুখ না করে নামাজ পড়েন তবে নামাজ হবে না।
০৪. ওয়াক্ত (নামাজের নির্ধারিত সময়)
প্রতিটি নামাজের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সেই সময়ে Namaz আদায় করা ফরজ। নামাজের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে নামাজ পড়া যাবে না।
০৫.নিয়ত করা (উদ্দেশ্য)
নামাজ শুরুর আগে নিয়ত করা আবশ্যক। নিয়ত হলো Namaz পড়ার মানসিক প্রস্তুতি ও নামাজের উদ্দেশ্যকে মনে মনে দৃঢ় করা।
০৬.তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার বলা)
নামাজ শুরুর সময় প্রথম তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা ফরজ। এর মাধ্যমে নামাজের বাহ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং এরপরে কোনো দুনিয়াবি কাজ করা নিষেধ।
নামাজের ভেতরের ৮ ফরজ:
নামাজের ভেতরের ফরজগুলো হলো নামাজের মধ্যে থাকা কাজ বা ধাপগুলো, যেগুলো যথাযথভাবে পালন করা জরুরি। ভেতরের ফরজগুলো হলো:
০১.কিয়াম করা (দাঁড়ানো)
নামাজে কিয়াম অর্থাৎ দাঁড়ানো ফরজ। ফরজ নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সূরা ফাতিহা এবং অন্যান্য সূরা পাঠ করতে হবে।
০২.কিরাত (তেলাওয়াত করা)
নামাজের প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং তার পরে অন্য একটি সূরা তেলাওয়াত করা ফরজ। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না।
০৩.রুকু করা
কিরাতের পরে রুকুতে যাওয়া ফরজ। রুকুতে গিয়ে কমপক্ষে তিনবার “সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আযিম” পাঠ করতে হবে।
০৪.সিজদাহ করা
রুকু থেকে উঠার পর সিজদাহ করা ফরজ। সিজদায় কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙুলের উপর ভর করে শুয়ে পড়তে হবে।
০৫.তাশাহুদে বসা
দুই রাকাত নামাজ হলে শেষ রাকাত এবং চার রাকাত নামাজ হলে দ্বিতীয় রাকাত শেষে তাশাহুদে বসা ফরজ। এতে “আত্তাহিয়্যাতু” পাঠ করতে হবে।
০৬.সালাম ফিরানো
ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা ফরজ।
০৭.তাকবির বলা
রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠা, সিজদায় যাওয়া এবং সিজদা থেকে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার বলা ফরজ।
নামাজের প্রতিটি কাজ নির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করে আদায় করতে হবে। কাজগুলোর ক্রম পরিবর্তন করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না।
নামাজের ফরজ (ফরজ) আমলগুলি কী কী?
নামাজের ফরজ আমলগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত: ফরজ-এ-ক্বল (ফরজ মৌখিক আমল) এবং ফরজ-এ-ফি’লি (ফরজ শারীরিক আমল)।
১. ফরযে ক্বল (ফরযে মৌখিক কাজ)
- নামাজে যে মৌখিক কাজগুলো অবশ্যই পাঠ করতে হবে:
- তাকবীরে তাহরিমা (শুরুতে তাকবীর): Namaz শুরু হয় “আল্লাহু আকবার” বাক্যাংশ দিয়ে।
- ক্বিরাআত (কুরআন তেলাওয়াত): প্রতি রাকাতে কুরআনের কমপক্ষে একটি আয়াত পাঠ করা।
- তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতের জন্য বসা): শেষ বসার অবস্থানে তাশাহহুদ পাঠ করা।
- তাসলিম (নামাজ শেষ করার জন্য সালাম): Namaz শেষ করার জন্য উভয় দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলা।
২. ফরযে ফী’লি (ফরযে শারীরিক কাজ)
এই কাজগুলো নামাজের শারীরিক সম্পাদন নিশ্চিত করে:
- ক্বিয়াম (দাঁড়ানো অবস্থান): শারীরিকভাবে সক্ষম হলে একজন ব্যক্তিকে নামাজের সময় দাঁড়াতে হবে।
- রুকু (নিচু হওয়া): হাঁটুর উপর হাত রেখে ৯০ ডিগ্রি কোণে রুকু করা।
- সিজদা (সিজদা): প্রতিটি রাকাতে কপাল, নাক, হাতের তালু, হাঁটু এবং পায়ের আঙ্গুল মাটিতে স্পর্শ করে দুটি সিজদা করা।
- কা‘দাহ আখিরাহ (শেষ বসা): তাশাহহুদ পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেষ রাকাতে বসে থাকা।
কেন এই কাজগুলো ফরজ?
এই প্রতিটি কাজ কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উদ্ভূত। উদাহরণস্বরূপ:
কুরআন (২:৪৩): “আর সালাত কায়েম করো, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।”
হাদিস (বুখারী ও মুসলিম): নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছো সেভাবে সালাত আদায় করো।”
ফরজ আমল বোঝার গুরুত্ব
ফরজ আমল বোঝা নিশ্চিত করে যে Namaz সঠিকভাবে আদায় করা হচ্ছে, একজন মুসলিমের ঈমান ও ভক্তি জোরদার করা হচ্ছে। এটি এমন ভুলও প্রতিরোধ করে যা বাতিল নামাজের দিকে পরিচালিত করতে পারে, পরিণামে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা এবং আল্লাহর আদেশের আনুগত্য নিশ্চিত করে।
উপসংহার:
নামাজের ফরজ কয়টি ও নামাজে ফরজ অংশগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলো যথাযথভাবে পালন না করলে Namaz বাতিল হয়ে যায়। তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত নামাজের ফরজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখা এবং তা অনুযায়ী Salat আদায় করা।
ইসলামী শিক্ষা অনুসারে namaz আদায় করা নিশ্চিত করার জন্য নামাজের ফরজ আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৌখিক হোক বা শারীরিক, প্রতিটি আমলেরই নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে এবং আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। এই ফরজগুলো বোঝার এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে, মুসলমানরা তাদের নামাজ নিখুঁতভাবে আদায় করতে পারে এবং কার্যকরভাবে আল্লাহর আশীর্বাদ পেতে পারে।
আরো পড়তে পারেন 👉
🤱ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নামের তালিকা অর্থসহ
🤱ইসলামিক নাম ছেলেদের অর্থসহ
সালাতের ফরজ কাজ সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন ১: সালাতের কোন ফরজ কাজ মিস করলে কী হবে?
যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ফরজ কাজ মিস করা হয়, তাহলে সালাত বাতিল হয়ে যায় এবং পুনরায় আদায় করতে হবে।
প্রশ্ন ২: সিজদা ছাড়া কি নামাজ শুদ্ধ হতে পারে?
না, সিজদা নামাযের একটি মৌলিক অংশ, এবং এটি না দিলে salat নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন ৩: কি প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ?
হ্যাঁ, সহীহ হাদিস অনুসারে, প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক।
প্রশ্ন ৪: যদি আমি দাঁড়াতে অক্ষম হই, তাহলে কি আমি বসে namaz পড়তে পারি?
হ্যাঁ, যদি কেউ শারীরিকভাবে দাঁড়াতে অক্ষম হয়, তাহলে তারা তাদের অবস্থা অনুসারে বসে এমনকি শুয়েও পড়তে পারে।