সূচনা :
নামজারি বা জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই আপনি যদি জমির নামজারি করতে চান তাহলে অবশ্যই নামজারি করতে কত টাকা লাগে , নামজারি করতে কি কি লাগে এবং নামজারি করতে কতদিন সময় লাগে এই তথ্যগুলো জানা অবশ্যক। এটি জানার মাধ্যমে আপনার জমির নামজারি করার প্রক্রিয়াটা আরো সহজ হবে।
এটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জমি একজন মালিকের নাম থেকে আরেকজন মালিকের নামে স্থানান্তর করা হয়।
এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ, কাগজপত্র এবং ব্যয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। এই আর্টিকেলে, আমরা এটি করার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ, কাগজপত্র, এবং সময়কাল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নামজারি কি :
অন্যের জমির মালিকানা নিজের নামের রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া কে নামজারি বলে, অর্থাৎ জমির বর্তমান মালিকানা থেকে সংশোধন করে সেটি নতুন মালিকানা স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে নামজারি বা mutation বলা হয়। সাধারণত জমি ক্রয়-বিক্রয় কিংবা দান করার ক্ষেত্রে নামজারি করার প্রয়োজন হয়। আর এই পদ্ধতিতে জমির পূর্বের মালিকানা পরিবর্তন হয়ে নতুন মালিকানা রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।
নামজারি করতে কত টাকা লাগে?
নামজারি করার খরচ নির্ভর করে জমির ধরণ, অবস্থান এবং সরকারের নির্ধারিত ফি-এর উপর। সাধারণত, নামজারি প্রক্রিয়ার জন্য নিম্নলিখিত খরচগুলো হয়:
বর্তমানে, অনলাইনে ই নামজারি করার জন্য মোট= ১,১৭০ টাকা খরচ হয়, যার মধ্যে আবেদন দাখিলের সময় কোর্ট ফি বাবদ -২০ টাকা এবং বিজ্ঞপ্তি জারির ফি বাবদ ৫০ টাকা , মোট ৭০ টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তীতে খতিয়ান প্রস্তুত হলে DCR বাবদ ১,১০০ টাকা অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধ করে খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন
নামজারি করতে কতদিন সময় লাগে?
অনলাইনে নামজারি আবেদন শেষ করতে মোট ২৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। কারণ আবেদনটি ঘোষণা, জমি ঘোষণা এবং দাতার দ্বারা গ্রহীতার তথ্য প্রদানের মতো বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। দাতার তথ্য সংযুক্তি, ফি প্রদান, এর পরে ডিসিআর খতিয়ান প্রস্তুত হতে মোট ২৮ দিন পর্যন্ত সময় ধার্য করা হয়।
সেই সময়ের মধ্যে, নামজারি আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই নামজারি ওয়েবসাইটে অনলাইনে পরীক্ষা করা যাবে।
নামজারি করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
- নামজারি প্রক্রিয়া শুরু করার আগে নিম্নলিখিত নথিগুলো প্রস্তুত রাখা জরুরি:
- জমির দলিল: জমির বৈধ দলিল (সেল ডিড বা হেবা দলিল) জমা দিতে হবে।
- মিউটেশন খতিয়ান: জমির মালিকানার প্রমাণ হিসেবে পূর্ববর্তী খতিয়ান দরকার।
- পরিশোধিত খাজনার রসিদ: জমির বকেয়া খাজনা পরিশোধ করার প্রমাণপত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি।
- আদালতের আদেশ: যদি জমি সংক্রান্ত কোনো মামলা চলে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট আদালতের আদেশ জমা দিতে হবে।
- স্মারক কপি: জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটির পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করার জন্য স্মারক কপি দরকার।
- নামজারি আবেদন ফর্ম: ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত নামজারি আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
নামজারি করতে অতিরিক্ত নথিপত্র যা যা লাগে :
- উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা হলে উত্তরাধিকার সনদ।
- কোনো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি থাকলে তার অনুলিপি।
জেনে নিন দলিল যদি না থাকে বাবা-মার সম্পত্তি কিভাবে বের করবেন
দ্রুত নামজারি করার টিপস:
- প্রয়োজনীয় নথিপত্র আগে থেকেই সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন।
- ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মেনে চলুন।
- অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া ব্যবহার করুন, যেখানে উপলব্ধ।
নামজারি করার ধাপসমূহ:
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
- আবেদন ফর্ম সংগ্রহ: স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে নামজারি আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন অথবা অনলাইনে ডাউনলোড করুন।
- নথিপত্র জমা: প্রয়োজনীয় নথিপত্র আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করে জমা দিন।
- ফি প্রদান: আবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারিত ফি জমা দিন।
- তদন্ত প্রক্রিয়া: ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জমি পরিদর্শন করে নথিপত্র যাচাই করবেন।
নামজারি সম্পন্ন: সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে আপনার নামে জমি নিবন্ধিত হবে এবং নতুন খতিয়ান ইস্যু করা হবে।
✍এছাড়াও এখানে ক্লিক করে👇👇
👉পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার নিয়ম জেনে নিন সহজ ভাবে।
👉সহজে রবি নাম্বার জানার সঠিক কোড।
👉মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন: সুবিধা, নিরাপত্তা ও ব্যবহারবিধি
উপসংহার:
নামজারি করা জমির মালিকানা সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হলে প্রয়োজনীয় খরচ, সময় এবং কাগজপত্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। সঠিক নথিপত্র প্রস্তুত রাখলে এবং প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে নামজারি দ্রুত এবং সহজে সম্পন্ন হয়।
অনলাইনে নামজারি সম্পর্কে প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ):
১. নামজারি কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, জমির বৈধ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে এবং ভবিষ্যতে জমি নিয়ে কোনো বিরোধ এড়াতে নামজারি বাধ্যতামূলক।
২. নামজারি করতে অনলাইনে আবেদন করা যায় কি?
হ্যাঁ, বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইনে Mutation আবেদন করার সুবিধা উপলব্ধ। স্থানীয় ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করা যায়।
৩. নামজারি ফি কোথায় জমা দিতে হয়?
নির্ধারিত ফি স্থানীয় ভূমি অফিসে জমা দিতে হয় অথবা অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪.ই-নামজারি করতে কত সময় লাগে?
সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে এটি এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে।
৫. নামজারি সংক্রান্ত কোনো বিরোধ থাকলে কী করতে হবে?
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
ই-নামজারি প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নির্দেশনা পেয়েছেন বলে আশা করছি। সঠিক নথিপত্র প্রস্তুত রাখুন এবং প্রয়োজন