ভূমিকা:
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম শিরোনামে আমরা একটি বিষয় জানি পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষা, কাজ বা চিকিৎসার জন্য অত্যাবশ্যক। তাই আপনি যদি পাসপোর্ট ধারী হন তাহলে নিধারিত সময়ে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তা রিনিউ করা জরুরি। বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম সময়ের সঙ্গে সহজ এবং প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছে। আজকের এই পোস্টে আমরা জানব কীভাবে পাসপোর্ট রিনিউ করতে হয়, প্রয়োজনীয় নথি, প্রক্রিয়া, খরচ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
চলুন জেনে নেই অনলাইনে জমির খতিয়ান অনুসন্ধান বা জমির খতিয়ান যাচাই করুন অনলাইনের মাধ্যমে। তো আপনার জন্যই আজকের এই আর্টিকেলটি। চলুন জেনে নেই, পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৫
পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রয়োজন কেন?
আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, হারিয়ে গেলে, বা নষ্ট হয়ে গেলে, দ্রুত এটি নবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে পাসপোর্ট নবায়ন না করলে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই সময়মতো পাসপোর্ট নবায়ন নিশ্চিত করা প্রতিটি পাসপোর্টধারীর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
১. মেয়াদ শেষ হওয়া: পাসপোর্টের সাধারণত ৫ বা ১০ বছরের মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রিনিউ করাটা ভ্রমণ পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. নতুন তথ্য যোগ করা: বিবাহের পর নাম পরিবর্তন, ঠিকানা পরিবর্তন, বা পাসপোর্টে ভুল সংশোধনের প্রয়োজন হলে রিনিউ প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে হয়।
৩. ভ্রমণের সহজতা: মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশি দূতাবাস বা এয়ারপোর্টে সমস্যা হতে পারে।
সাধারণ সমস্যাগুলি ও সমাধান:
১. ডকুমেন্ট অসম্পূর্ণতা: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পূর্ণ না থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
সমাধান: জমা দেওয়ার আগে ডকুমেন্ট চেক করুন।
২. অনলাইন ফর্মে ভুল: ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
সমাধান: সাবমিট করার আগে তথ্য যাচাই করুন।
✍এছাড়াও এখানে ক্লিক করে👇👇
👉পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার নিয়ম জেনে নিন সহজ ভাবে।
👉সহজে রবি নাম্বার জানার সঠিক কোড।
👉মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন: সুবিধা, নিরাপত্তা ও ব্যবহারবিধি
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত খরচ হয়?বা পাসপোর্ট রিনিউ ফি:
২০২৫ সালে সরকারী তথ্য অনুসারে, নতুন পাসপোর্ট আবেদন এবং পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি একই। সেক্ষেত্রে :
০১.48 পৃষ্ঠা এবং 5 বছরের মেয়াদ সহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: 4,025 টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 6,325 টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 8,625 টাকা
০২.48 পৃষ্ঠা এবং 10 বছরের মেয়াদ সহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: 5,750 টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 8,050 টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 10,350 টাকা
০৩.64 পৃষ্ঠা এবং 5 বছরের মেয়াদ সহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: 6,325 টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 8,625 টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 12,075 টাকা
০৪.64 পৃষ্ঠা এবং 10 বছরের মেয়াদ সহ ই-পাসপোর্ট
নিয়মিত ডেলিভারি: 8,050 টাকা
এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 10,350 টাকা
সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি: 13,800 টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে:
১. পূরণকৃত অনলাইন ফরম।
২. আগের পাসপোর্ট (মূল ও ফটোকপি)।
৩. পাসপোর্ট সাইজের ছবি (লাল ব্যাকগ্রাউন্ডে)।
৪. জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি বা জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি (বয়স ১৯ বা তার কম হলে)।।
৫. ফি জমার রসিদ।
৬. বিবাহ সনদ (যদি নাম পরিবর্তন করতে হয়)।
৭.সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO/NOC (যদি থাকে)।
৮.হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল জিডির কপি
৯.পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
১০.তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (প্রযোজ্য হলে)।
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৫:
বর্তমানে বাংলাদেশে সব পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। তাই যদি আপনি কোন পাসপোর্ট রিনিউ করতে চান,তবে রিনিউ করে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। কারণ বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ছাড়া অন্য কোন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছেনা। এজন্য অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে ।
এবার আপনার মেয়াদ শেষ হওয়া পাসপোর্টের রিনিউয়ের আবেদন কিভাবে করবেন তার পুরো বিষয় টি জানবেন । এতে চিন্তার কোন কারণ নাই । কারণ নতুন ই-পাসপোর্টের মতোই, আপনি ঘরে বসে অনলাইনে সহজেই রিনিউয়ের আবেদন করতে পারেন।
এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র এর তথ্য অনুযায়ী করতে হবে। এবং আপনার ব্যক্তিগত সকল তথ্যই NID কার্ড বা নিবন্ধনের অনলাইন কপি অনুযায়ী হতে হবে। অর্থাৎ ই-পাসপোর্টে রিনিউ করার ক্ষেত্রেও জাতীয় পরিচয়পত্রে দেয়া তথ্যাদি অনুসরণ করা আবশ্যক ।
পাসপোর্ট রিনিউ করার অনলাইন প্রক্রিয়া:
সর্বপ্রথম আপনাকে পাসপোর্ট রিনিউর আবেদন করার সময় একটি নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য যেভাবে আবেদন করতে হয় সেভাবেই করতে হবে। তবে শুধু একটি অপশনে অর্থাৎ ID Documents অপশনে কিছু তথ্য দিতে হবে।
অনলাইনে নতুনভাবে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় যে সব তথ্য সাধারনত দিতে হয় তা হলো-
০১.Personal Information
০২.Address
০৩.ID Documents
০৪.Spouse Information
০৫.Emergency contract
০৬.Passport option
০৭.Delivery Options & Appointment
বাংলাদেশ সরকারের পাসপোর্ট ও অভিবাসন অধিদপ্তরের অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে রিনিউ করার প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। তবে উপরোক্ত তথ্যগুলোর মধ্যে কেবল ID Documents অপশনে যাবার পর নিম্মোক্ত ধাপ সমূহ অনুসরণ করতে হবে। নিচে ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:
প্রথম ধাপঃ
আবেদন করার সময় ID Document অপশন আসলেই উপরের পেইজটি চলে আসবে। এখানে প্রথমেই আপনাকে জানতে চাওয়া হবে Do you have a previous passport? এখানে আপনাকে “Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP)” অপশনটি নির্বাচন করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ
যখন আপনি Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP) এই অপশনটি select করলেন তখন আপনার কাছে জানতে চাওয়া হবে What is the reason for your passport request?
অর্থাৎ, কেন আপনি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছেন, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। এই ক্ষেত্রে, “Select Reissue Reason” অপশনে বেশ কিছু বিকল্প প্রদর্শিত হবে, যেমন:
EXPIRED- যদি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়
LOST/ STOLEN- যদি হারিয়ে যায় বা চুরি হয়ে যায়
DATA CHANGE- তথ্য পরিবর্তনের জন্য
UNUSABLE – পাসপোর্ট যদি নষ্ট হয়ে যায়, ছিঁড়ে যায়, বা ব্যবহার উপযোগিতা হারায়।
OTHER- অন্যান্য কারণে
উপরের অপশন থেকে আপনাকে যে কোন একট সিলেক্ট করতে হবে।
তৃতীয় ধাপঃ
এই পর্যায়ে আপনার পুরাতন পাসপোর্টের নাম্বার লিখতে হবে।
চতুর্থ ধাপঃ
চতুর্থ ধাপে আপনাকে পুরাতন পাসপোর্টের প্রদানের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লিখতে হবে।
ID Document অপশন পূরণের ক্ষেত্রে উপরের ধাপগুলো অনুস্মরণ করার পর বাকী কাজ যথাযথভাবে নতুন আবেদনের মতো করতে হবে।
আপনার পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করার পর, আবেদনের কপি এ-ফোর সাইজের কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করতে হবে। এরপর পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ করার সময়কাল:
১. সাধারণ পদ্ধতি: আবেদন জমা দেওয়ার পর ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবস।
২. জরুরি পদ্ধতি: ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস।
পাসপোর্ট রিনিউ সংক্রান্ত সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর :
প্রশ্ন:বাংলাদেশে কোন কোন ব্যাংক পাসপোর্ট ফি নেয়?
উত্তর:অনলাইন: “ekpay” এর মাধ্যমে (পেমেন্টের বিকল্প: VISA, Master Card, American Express, bKash, Nagad, Rocket, Upay, Dmoney, OK Wallet, Bank Asia, Brack Bank, EBL, City Bank, UCB, AB Bank, DBBL, Midland ব্যাংক, এমবিএল রেইনবো )
প্রশ্ন: পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য কোন কোন নথি জরুরি?
উত্তর: পুরানো পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং ফি জমার রসিদ।
প্রশ্ন: জরুরি পাসপোর্ট রিনিউ কতদিনে হয়?
উত্তর: জরুরি প্রক্রিয়ায় ৭ থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার কত দিন আগে রিনিউ করা উচিত?
উত্তর: মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৬ মাস আগে রিনিউ করা উচিত।
প্রশ্ন: ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
উত্তর: ই পাসপোর্ট ফি কত টাকা
মেয়াদ পৃষ্ঠা সংখ্যা টাকা
৫ বছর ৪৮ পৃষ্ঠা ৪০২৫ টাকা
৬৪ পৃষ্ঠা ৬৩২৫ টাকা
১০ বছর ৪৮ পৃষ্ঠা ৫৭৫০ টাকা
৬৪ পৃষ্ঠা ৮০৫০ টাকা
প্রশ্ন: পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে
উত্তর:
01.আবেদনপত্রের সারাংশের প্রিন্ট কপি (অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহ)
02.সনাক্তকরণ ডকুমেন্টের কপি (জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ)
03.পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এবং ডাটা পেজের কপি
04.এ চালান/ মানি অর্ডার/ ব্যাংক সার্টিফাইড চেকবুক
05.সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO/NOC যদি থাকে
উত্তর:প্রশ্ন:পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত টাকা লাগে?
২০২৩ সালের তথ্যানুসারে, পাসপোর্ট রিনিউয়ের ফি নতুন পাসপোর্টের ফি’র মতোই। এক্ষেত্রে ৫ বছরমেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা। আর ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা। অন্যদিকে ১০ বছরমেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা ও ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা
উপসংহার:
অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেক সহজ। সঠিক ডকুমেন্টস ও নিয়ম মেনে চললে দ্রুত পাসপোর্ট রিনিউ করা সম্ভব। আশা করি, এই পোস্ট থেকে যা পড়লেন তা আপনার জন্য অনেক সহায়ক হবে। তাই বিদেশে যাত্রা সহজ করতে নিয়ম অনুযায়ী রিনিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।