মোবাইল ব্যাংকিং-এর হুমকি এবং কীভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন

✍ পোস্ট সূচিপত্র

ভূমিকা:

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং সেবা মোবাইল ব্যাংকিং । ফলে অনেকেই সহজলভ্যতা এবং নিরাপত্তার কারণে  এই মোবাইল সার্ভিসকে তাদের দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য বেছে নিচ্ছেন।মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করছে। খুব সহজেই অর্থ স্থানান্তর করা এবং কেনাকাটার সুবিধা থাকায় মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে লোকজন Mobile Banking অ্যাকাউন্ট খুলছেন।

 ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে মোবাইল আর্থিক সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৩০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি। প্রতিদিন নতুন গ্রাহক মোবাইল সার্ভিসের এই সেবা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করছেন।  তবে, মোবাইলের মাধ্যমে শর্টকোড ডায়াল করে পিন নম্বর দিয়ে টাকা স্থানান্তর করার কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকিও থেকে যায়  যা আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন । আর এই নিবন্ধে আমি  এই  মোবাইল সার্ভিসের   প্রধান হুমকি এবং কীভাবে এসব হুমকি থেকে নিরাপদ থাকা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো ।

মোবাইল ব্যাংকিং-এর প্রধান হুমকিসমূহ:

১. ফিশিং আক্রমণ

ফিশিং আক্রমণের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। সাধারণত এটি প্রতারণামূলক ইমেল বা মেসেজের মাধ্যমে ঘটে, যা ব্যবহারকারীদের ব্যাংকিং লগইন তথ্য বা পিন নম্বর জানাতে প্রলুব্ধ করে।

২. ম্যালওয়্যার আক্রমণ

মোবাইল ম্যালওয়্যার হল এক ধরনের ভাইরাস যা আপনার ডিভাইস থেকে সংবেদনশীল তথ্য চুরি করতে পারে। এই ম্যালওয়্যার প্রায়শই ক্ষতিকর অ্যাপ বা অজানা লিঙ্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

৩. ওয়াই-ফাই হ্যাকিং

প্রকাশ্য ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় হ্যাকাররা সহজেই আপনার মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য চুরি করতে পারে। এটি একটি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক হুমকি যা ব্যবহারকারীদের প্রায়শই নজরে আসে না।

৪. অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং:

হ্যাকাররা সরাসরি ব্যবহারকারীদের ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে এবং সমস্ত তহবিল চুরি করতে পারে। পাসওয়ার্ড দুর্বল হলে বা ডিভাইস নিরাপদ না হলে এই ধরনের আক্রমণ সম্ভব হয়।

৫. সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং:

এটি একটি কৌশল যেখানে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে এবং বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে তাদের থেকে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করে। তারা সাধারণত টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করে।

০৬.নিম্নমানের ব্যাংকিং অ্যাপস:

মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সাধারণ ব্যাংকিংয়ের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি সুরক্ষিত হওয়ার কথা, তবে অনেক সময় দুর্বল কোডিং মানের কারণে তথ্য লঙ্ঘন ও নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যায়। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বিকাশকারীরা প্রায়শই বর্তমান সাইবার হুমকি সম্পর্কে সঠিকভাবে সচেতন থাকেন না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইন লেনদেনের সময় সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হন।

০৭ .তৃতীয় পক্ষের অ্যাপস:

বেশিরভাগ ব্যবহারকারী উন্নত মোবাইল ও ট্যাবলেট অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, তবে এই অ্যাপগুলোর অনেকাংশই তৃতীয় পক্ষ থেকে আসে, যেখানে প্রায়ই নিরাপত্তার যথাযথ মান বজায় রাখা হয় না। এছাড়াও, কিছু অ্যাপ্লিকেশন প্রতারক দ্বারা তৈরি করা হয় এবং এতে ম্যালওয়্যার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

০৮.অনিরাপদ ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক:

অনিরাপদ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা প্রতারকদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে, যেখানে তারা সহজেই সেল ফোনে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।

✍এছাড়াও এখানে ক্লিক করে👇👇
👉পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার নিয়ম জেনে নিন সহজ ভাবে
👉সহজে রবি নাম্বার জানার সঠিক কোড।
👉মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন: সুবিধা, নিরাপত্তা ও ব্যবহারবিধি

কীভাবে মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন:

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পাসওয়ার্ডে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ অক্ষর ব্যবহার করতে পারেন।

২. দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ সক্রিয় করুন:

দ্বি-স্তরীয় প্রমাণীকরণ এই  মোবাইল সার্ভিসের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়াতে সহায়ক। এটি আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার আগে আপনার মোবাইলে একটি OTP কোড পাঠায়, যা আপনাকে বাড়তি সুরক্ষা প্রদান করে।

আরো পড়তে পারেন 👉
🤱ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নামের তালিকা অর্থসহ
🤱ইসলামিক নাম ছেলেদের অর্থসহ

৩. বিশ্বস্ত উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন:

অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. পাবলিক ওয়াই-ফাই এড়িয়ে চলুন

পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে Mobile Banking লেনদেন করা বিপজ্জনক। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যক্তিগত মোবাইল ডেটা বা নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন।

৫. নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন

নিয়মিত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ডিভাইস সফটওয়্যার আপডেট করুন যাতে সর্বশেষ নিরাপত্তা প্যাচ এবং বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যবহার করা যায়।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিরাপদ থাকার উপায়:

মোবাইল ব্যাংকিং-এর ভবিষ্যত এবং নতুন চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এই  মোবাইল সার্ভিসের চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। তাই নিয়মিত আপডেট থাকা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে আরও উন্নত সাইবার আক্রমণ হতে পারে, তাই ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিরাপদ থাকার উপায়

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিরাপদ রাখতে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:

পিন নম্বর গোপন রাখুন:

যদি আপনার একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থাকে (যেমন বিকাশ, ডিবিবিএল), তবে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পিন নম্বর সেট করুন। এই পিন নম্বর যেন কেউ জানতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকুন।

ভুয়া কাস্টমার কেয়ার থেকে সাবধান:

যদি কেউ কাস্টমার কেয়ারের ভুয়া পরিচয়ে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের (যেমন বিকাশ) পিন নম্বর জানতে চায়, তবে পিন নম্বর না দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং সেবার হেল্পলাইনে অভিযোগ করুন। কারণ, ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার কখনোই পিন নম্বর জানতে চাইবে না।

নিবন্ধিত সিমে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলুন:

অবশ্যই আপনার সঠিকভাবে নিবন্ধিত সিম দিয়ে এখানে অ্যাকাউন্ট খুলুন। নতুবা আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা অন্য কেউ সেটি হস্তান্তর করতে পারে। সিমের বৈধ কাগজপত্র থাকলে আপনি সহজেই পুনরায় সিম তুলে এই  মোবাইল সার্ভিসের সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রতারকদের থেকে সাবধান:

অনেক প্রতারক প্রলোভন দেখিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যেমন, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয় যে আপনি লটারি জিতেছেন, বা ‘জ্বীনের বাদশা’ সেজে বিকাশ করতে বলা হয়। এসব ফাঁদে পা দেবেন না। প্রতারকের ফোন নম্বরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবার হেল্পলাইনে অভিযোগ করুন।

ভুয়া কল ও মেসেজের ব্যাপারে সাবধান:

বিকাশ বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং থেকে আসা মেসেজে প্রেরকের স্থানে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম (যেমন bKash) লেখা থাকে। কোনো ভুয়া মেসেজ পেলে, মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে ডায়াল করে ব্যালেন্স চেক করে নিশ্চিত হয়ে নিন।

টাকা পাঠানোর আগে নিশ্চিত হোন:

এই সার্ভিসের মাধ্যমে অন্য কারো কাছে টাকা পাঠানোর আগে সেই নম্বরে কল করে নিশ্চিত হোন যে টাকা সঠিক ব্যক্তির কাছে যাবে। প্রতারকরা নম্বর ক্লোনিং করে আপনার আত্মীয় বা পরিচিতজন সেজে টাকা চাইতে পারে।

সর্বশেষ ব্যালেন্সের হিসাব রাখুন:

আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা আছে, তা মনে রাখুন। জরুরি প্রয়োজনে এটি কাজে লাগবে।

যদি আপনার মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব মোবাইল ব্যাংকিং হেল্পলাইনে কল করে আপনার অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

উপসংহার:

মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের জীবনে অসংখ্য সুবিধা এনেছে, কিন্তু এর সাথে নিরাপত্তা ঝুঁকিও এসেছে। সচেতনতা এবং সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপনি Mobile Banking-এর সর্বোচ্চ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।  নিঃসন্দেহে, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মানুষের আর্থিক কার্যক্রমকে সহজ এবং দ্রুত করেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি হ্যাকারদের মাধ্যমে তথ্য চুরির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও বেড়েছে। তাই, অনলাইন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাটাই মূল চাবিকাঠি।

এই নিবন্ধে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলি সাধারণ নিরাপত্তা ঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে আরও সুরক্ষিত করতে সহায়ক হতে পারে।সুতরাং, এই হুমকি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন এবং আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা সুরক্ষিত রাখুন।

 

Leave a Comment